সংগৃহীত
নদী এবং জলাশয়ের পানি নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার জন্য বাঁধ ও ব্যারাজ হলো দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো। যদিও উভয় কাঠামোর উদ্দেশ্য অনেকটা একই, যেমন- সেচ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি সংরক্ষণ; তবে এগুলোর গঠন, কার্যকারিতা এবং পরিবেশগত প্রভাবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে।
বাঁধ :
বাঁধ হলো নদীর প্রবাহের সাথে সমকোণে (আড়াআড়ি) স্থাপিত প্রতিবন্ধক এবং পানি বিদ্যুৎ প্রকল্পের মূল স্থাপনা, যেমনটা কাপ্তাই বাঁধ। সাধারণত খরস্রোতা নদীর প্রবাহকে বাঁধ দিয়ে আটকে এর উজানে জলাধার তৈরি করে পানির উচ্চতা বাড়ানো হয়। এরপর জলাধারের নিচে সুড়ঙ্গের মাধ্যমে এই পানিকে প্রবাহিত করে টারবাইন ঘুরিয়ে উৎপন্ন করা হয় বিদ্যুৎ।
বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানির প্রবাহ বাড়লেও জলধারা আটকে রাখার কারণে ভাটি অঞ্চলে পানির প্রবাহ কমে যাবে। অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে উজান থেকে পানি কম আসলেও বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রয়োজনে জলাধার থেকে নিয়মিত পানি ছাড়া হবে, ফলে বাঁধের ভাটিতে পানির প্রবাহ আগের থেকে বাড়বে।
ব্যারেজ :
ব্যারেজ হলো নদীর পানিকে একাধিক গেইট দিয়ে নিয়ন্ত্রিতভাবে প্রবাহিত করা। ব্যারেজের ঠিক উজানে এক বা একাধিক কৃত্রিম খাল খনন করে নিয়ন্ত্রিতভাবে পানি প্রবাহিত করে আরো ছোট ছোট খাল দিয়ে (তিস্তা ব্যারেজ, বাংলাদেশ) বা পাম্পের মাধ্যমে (জিকে প্রকল্প, বাংলাদেশ) আবাদি জমিতে সেচ দেয়া হয় অথবা অন্য কোন নদীতে পানি প্রবাহ বাড়ানো হয় (যেমন ফারাক্কা ব্যারেজ)। অর্থাৎ ব্যারেজের মূল লক্ষ্যই থাকে একটি নদী থেকে পানি অপসারণ, অন্যদিকে বাঁধের মূল উদ্দেশ্য উজানে পানি সঞ্চয়।
বাঁধ ও ব্যারেজের মধ্যে পার্থক্য
➤ বাঁধ হলো নদীর প্রবাহের সাথে সমকোণে স্থাপিত প্রতিবন্ধক এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের মূল স্থাপনা। অন্যদিকে, ব্যারেজ হলো নদীর পানিকে একাধিক গেইট দিয়ে নিয়ন্ত্রিতভাবে প্রবাহিত করা।
➤ বাঁধগুলি সাধারণত কংক্রিট বা মাটি দিয়ে তৈরি। অন্যদিকে, ব্যারেজ কংক্রিট, ইস্পাত বা মাটি দিয়ে তৈরি হতে পারে।
➤ বাঁধগুলি সাধারণত ব্যারেজের চেয়ে অনেক বড় হয়, কারণ সেগুলি প্রচুর পরিমাণে পানি ধরে রাখার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। অন্যদিকে, বাঁধের তুলনায় ব্যারেজগুলি আকারে ছোট হয়ে থাকে।
➤ বাঁধগুলি সাধারণত একটি দীর্ঘ, বাঁকা প্রাচীরের মতো আকৃতির হয়। অন্যদিকে, ব্যারেজ সাধারণত ছোট এবং আয়তাকার হয়।
➤ বাঁধগুলো পানির প্রবাহ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়। অন্যদিকে, ব্যারেজগুলি তাদের মধ্য দিয়ে কিছু পানি প্রবাহিত করতে দেয়।
সূত্র: যুগান্তর