সংগৃহীত
পবিত্র কোরআনুল কারিমের হেফজ করা সৌভাগ্যের বিষয় হলেও তা কিন্তু খুব সহজ নয়। তারপরও আমাদের দেশে প্রতিবছর অসংখ্য হাফেজে কোরআন তৈরি হচ্ছে। তারা তাদের অসাধারণ তেলাওয়াত ও মুখস্থ প্রতিভা দিয়ে আমাদের মুগ্ধ করে চলেছেন প্রতিনিয়ত।
ঠিক তেমনই এক কঠিন কাজ করলেন হাফেজ রায়হান আহমাদ। তিনি টানা ১৮ ঘণ্টায় নির্ভুলভাবে শুনিয়েছেন পুরো কোরআনুল কারিম।
বৃহস্পতিবার ফজরের পর চাশতের নামাজ আদায় করে হাফেজ রায়হান তার শিক্ষক হাফেজ মাওলানা মাহবুব রায়হানকে পবিত্র কোরআন শোনানো শুরু করেন। মাঝে শুধুমাত্র নামাজ ও খাবার গ্রহণের জন্য সামান্য বিরতি গ্রহণ করেন। এভাবে মাত্র ১৮ ঘণ্টায় নির্ভুলভাবে কোরআন মাজিদ শোনানো শেষ করেন বিস্ময়বালক হাফেজ রায়হান আহমাদ।
হাফেজ রায়হান আহমদ সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার সাদারাই জামেয়া ইসলামিয়া মাদরাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র। মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আবুল খায়ের নির্ভুলভাবে পুরো কোরআন শোনানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে তার শিক্ষক হাফেজ মাওলানা মাহবুব রায়হান বলেন, ফজরের পর চাশতের নামাজ আদায় করে হাফেজ রায়হান আহমাদের থেকে পবিত্র কোরআন শোনা শুরু করি। নামাজের সময় ও খাবারের সংক্ষিপ্ত বিরতি ছাড়া সে আর কোনো বিরতি নেয়নি। এভাবে টানা ১৮ ঘণ্টায় পুরো কোরআন শুনিয়েছে সে। গড়ে প্রতি পারায় ৩০ মিনিট সময় লেগেছে তার। পুরো সময়ের মধ্যে তার কোনো লুকমা (ভুল) যায়নি।
‘তাকে শর্ত দেওয়া হয়েছিল- একটানা খতমের উদ্দেশ্যে পড়া শুরু করলে তা শেষ হওয়া পর্যন্ত কোরআন দেখা যাবে না এবং খতম শুরুর আগে হাফেজ রায়হান আহমদকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, নির্ভুল শুনাতে পারবে তো? পূর্ণ আত্মবিশ্বাস ও সাহসের সঙ্গে সে বলছিল- ইনশাআল্লাহ! পারব’।
‘আমি মনে মনে ধরে নিয়েছিলাম, প্রতি ১০ পারায় একটা লোকমা ক্ষমাযোগ্য। তবে ৩০ পারায় তিনটির বেশি ভুল হলে এই খতম আর শোনা হবে না। নতুন করে আবার শুরু থেকে শোনাতে হবে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, রায়হান আহমাদ আমাকে অবাক করে দিয়েছে। পুরো কোরআন নির্ভুলভাবে শুনিয়েছে সে। না কোনো শব্দ ভুল করেছে, না কোনো ইয়াদ ছুটে গেছে’ যোগ করেন শিক্ষক হাফেজ মাওলানা মাহবুব রায়হান।
তিনি উচ্ছ্বসিত হয়ে আরো বলেন, রায়হান আমার জীবনের প্রথম ছাত্র, যে পূর্ণ কোরআন বিনা লোকমায় আমাকে শুনিয়েছে। এটা আমার সবচাইতে বড় অর্জন- আলহামদুলিল্লাহ!
সাদারাই জামেয়ার মুহতামিম মাওলানা আবুল খায়ের ও নাজেমে তালিমাত মুফতি আব্দুল হাইসহ মাদরাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীরা আনন্দিত। মুহতামিম মাওলানা আবুল খায়ের বলেন, ‘নিঃসন্দেহে এটা মহান রবের মহাঅনুগ্রহ। সব প্রশংসা শুধু তারই। যিনি তওফিক দিয়েছেন কোরআন পড়ার, কোরআন ছোঁয়ার ও কোরআন মুখস্ত করার। প্রশংসার যত শব্দ; যত বাক্য সবই তার জন্য’।
সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ